ভারতে বাংলাদেশের আরও দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের ইউটিউব চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করেছে ইউটিউব। বাংলাদেশের এই চ্যানেলগুলোর ইউটিউব চ্যানেল ভারত থেকে দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে ভারত সরকারের অনুরোধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ইউটিউব। শনিবার (১০মে) ডিসমিস ল্যাব তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের আরও দুটি টেলিভিশন চ্যানেল, সময় টিভি ও ডিবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলের সম্প্রচারও ভারত থেকে বন্ধ করা হয়েছে। এই ছয়টি চ্যানেলই ইউটিউব ভেরিফায়েড (স্বীকৃত)। এদের মোট সাবস্ক্রাইবার ৫ কোটি ৪২ লাখের বেশি।
এই ইউটিউব চ্যানেলগুলো ভারতের দর্শকেরা দেখতে পারবেন না। ভারতের ভূ-অবস্থান থেকে এই চ্যানেলগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করলে একটি বার্তা সামনে আসে। তাতে বলা হয়, ‘এই কনটেন্টটি বর্তমানে এই দেশে প্রবেশযোগ্য নয়। কারণ, এটি জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত সরকারি আদেশের আওতায় রয়েছে।’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ইউটিউবের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে। যদি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না পাওয়া যায়, তাহলে পাল্টা পদক্ষেপ।
এর আগে, বাংলাদেশের চারটি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন এবং মোহনা টিভির ইউটিউব চ্যানেল ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কারণ দেখিয়ে ভারত সরকারের অনুরোধে এ পদক্ষেপ নেয় ইউটিউব। শুক্রবার (৯মে) এই চার চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয় বলে জানিয়েছে তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব।
ডিসমিসল্যাব আরও বলেছে, তাদের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় (শুক্রবার রাত আটটা) পর্যন্ত চ্যানেলগুলোতে প্রবেশ করা যায়নি। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করলে চ্যানেলটি জানিয়েছে, ইউটিউব থেকে ব্লক–সম্পর্কিত একটি আনুষ্ঠানিক নোটিশ তারা পেয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (৯মে) রাতে ফয়েজ আহমদ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশের অন্তত ৪টি টিভি স্টেশন জিও ব্লক করেছে ইউটিউব ভারত। ব্রডকাস্ট মিডিয়ামের ভৌগোলিক লোকেশন হিসেবে বাংলাদেশকে ব্লক করায় ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের যাঁরা এসব চ্যানেল নিয়মিত দেখেন, তাঁদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এমন কাজ কনজিউমার রাইটসের (ভোক্তা অধিকার) আন্তর্জাতিক নীতিবিরুদ্ধ বলেই প্রতীয়মান। আমরা ইউটিউবের কাছে এর ব্যাখ্যা চাইব। সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না পেলে আমরা পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।’
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যেই ইউটিউব কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। এসব চ্যানেল বৈধভাবে সম্প্রচার করে আসছে এবং কোনো ধরনের ভুয়া তথ্য বা উসকানিমূলক কনটেন্ট (আধেয়) প্রচারের প্রবণতা নেই।
এর আগে, ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে ভারত সরকার দেশটির স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ার ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইট নিজ দেশে ব্লক করেছে। এ নিয়ে দ্য ওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছে, এটা ভারতের সংবিধানে প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর আগে এক্স (সাবেক টুইটার) জানিয়েছে, ভারত সরকার আট হাজারের বেশি ‘অ্যাকাউন্ট’ ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের অ্যাকাউন্টও রয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতের নির্দেশে এক ডজনের বেশি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল,রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়দের ইউটিউব চ্যানেল ও তারকাদের ইনস্টাগ্রাম আইডি ব্লক করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে।
আরটিভি/এসকে
