যে সেতুর সৌন্দর্যে লুকিয়ে আছে শয়তানের ছোঁয়া!
এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে দাঁড়ালে মনে হবে, আপনি যেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে গেছেন। অসাধারণ নির্মাণশৈলী আর গভীর রহস্যে মোড়া এই ব্রিজ হাজারো পর্যটককে মুগ্ধ করে। ব্রিজটিকে কেউ কেউ মনে করেন মানুষের হাতে তৈরি নয়, বরং কোনো অদৃশ্য কোনশক্তির সৃষ্টি। জার্মানির স্যাক্সনি প্রদেশের ক্রোমলাউ পার্কে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত এই স্থাপত্য কর্মের নাম "ডেভিলস ব্রিজ" বা "রাকোৎজব্রুকে"। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেনো এর নাম "ডেভিলস ব্রিজ"? কী এর বিশেষত্ব যা আজও মানুষকে বিস্মিত করে?
জার্মানির স্যাক্সনি প্রদেশের ক্রোমলাউ পার্কে লুকিয়ে থাকা এই ব্রিজটি ব্রিজটি তৈরি হয়েছিল ১৮৬০-এর দশকে। এই ব্রিজটি মূলত একজন স্থানীয় নাইট ফ্রিডরিখ হারমান রোচকে কর্তৃক নির্মিত হয়। তখনকার প্রকৌশলীরা এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা প্রকৃতি আর স্থাপত্যের এক অসাধারণ মেলবন্ধন হবে। আর তাদের সেই পরিকল্পনা সফল হয় যখন এই ব্রিজ পানিতে প্রতিফলিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ গোলাকার আকার তৈরি করে।
এটি একটি সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট স্থাপত্যকীর্তি হলেও, বহু শতকের পুরনো কিংবদন্তি অনুসারে, মনে করা হয় এমন একটি নিখুঁত কাঠামো গড়তে শয়তানের সহায়তা নিতে হয়েছিল। এই ব্রিজটি লোককাহিনীর সঙ্গে যুক্ত, যেখানে বলা হয় যে প্রথম জীবন্ত প্রাণী ব্রিজ পার হলেই তাকে শয়তানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এভাবেই "ডেভিলস ব্রিজ" নামটি প্রচলিত হয়। যদিও এটি কল্পকাহিনী, তবুও এই ব্রিজের নির্মাণশৈলী আর তার রহস্য মানুষকে অবাক করে তোলে।
ডেভিলস ব্রিজের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এর আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ। গ্রীষ্মের সবুজ ছায়া থেকে শুরু করে শরতের সোনালি পাতার ঝিলমিল, প্রতি ঋতুতেই এই ব্রিজ তার ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য প্রকাশ করে। শীতকালে যখন তুষারপাত হয়, তখন এই ব্রিজকে ঘিরে সাদা কুয়াশা যেন স্বপ্নের মতো আবরণ ফেলে। যারা এখানে একবার আসেন, তারা বলেন, এই জায়গার সৌন্দর্য চিরকাল মনে থেকে যায়।
ব্রিজটি সংস্কার করা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, যাতে এর স্থায়িত্ব বজায় থাকে। কিন্তু বর্তমানে, দর্শকদের নিরাপত্তার জন্য ব্রিজটির ওপর দিয়ে হাঁটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে, দূর থেকে দাঁড়িয়ে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, এবং পানিতে সেই গোলাকার প্রতিফলন দেখাযায়। ডেভিলস ব্রিজ, শুধুই একটি ব্রিজ নয়, এটি এক ঐতিহাসিক নিদর্শন, যা মানুষের সৃষ্টিশীলতা আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের যেনোএক অনন্য উদাহরণ।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন