ম্যাচের শেষ সময়ে এসেও মাঠের বাইরে শত শত মানুষের জটলা। কেউ হন্য হয়ে ঘুরছেন একটা টিকিটের জন্য, কেউ আবার টিকিট নিয়েও ঘুরছেন প্রবেশ পথ খুঁজতে। দুবাই স্টেডিয়াম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে যানজট, রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাফিক।
মাঠের ঢোকা ৯৫ ভাগ সমর্থক যে পাকিস্তানের ছিল সেটা বোঝা যায় অজিদের একটা উইকেট কিংবা বাবর-রিজওয়ানদের ব্যাটে চার, ছয় আসলে। তবে শেষ পর্যন্ত সব স্তব্ধ করে দিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।
‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা পাওয়া পাকিস্তানের সামনে সুযোগ ছিল নিজেদের প্রেডিক্টেবল হয়ে ওঠার প্রমাণ দিতে। তবে শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে বাড়ি। সুপার টুয়েলভ পর্বে সবকটি ম্যাচ জিতে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করা পাকিস্তানের পা ফসকে গেল নানা সমীকরণ মিলিয়ে সেমি ফাইনালে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর মাঝে চারটি আসরে ফাইনাল খেলতে না পারলেও এবার তরুণদের কাঁধে চড়ে বড় সুযোগ এসেছিল ফাইনালে খেলার। সুপার টুয়েলভে ভারত, নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোকে হারিয়ে সেমি নিশ্চিত করা পাকিস্তান অজিদের সামনে ১৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েও হারতে হলো ৫ উইকেটে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শাহিন আফ্রিদির করার ওভারের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই সাজঘরে ফেরেন ০(১) রানে। শুরুটা হতাশায় হলেও শেষ পর্যন্ত একপাশ আগলে রাখেন আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।
মিচেল মার্শকে নিয়ে জুটি গড়েন ৫১ (৩৬) রানের। ইনিংসের সপ্তম ওভারে শাদাব খানের দ্বিতীয় বলে ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দেন মার্শ ২৮ (২২) আসিফ আলীর হাতে। তার এক ওভার পরে স্টিভেন স্মিথকেও (৫) ফেরান শাদাব। স্মিথের পর ৩০ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলা ওয়ার্নারকেও সাজঘরে ফেরান শাদাব।
সেমি ফাইনালের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মাত্র ৭ রান করে শাদাব খানের বলেই ক্যাচ দেন হারিস রৌফের হাতে।
অজিদের ৯৫ রানে ৫ উইকেটে নিয়ে ম্যাচটা যখন নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় পাকিস্তান ঠিক তখনই জ্বলে ওঠেন দুই অজি ব্যাটার মার্কুস স্টয়েনিস ও ম্যাথু ওয়েড।
দুজনেই আবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন অজিদের পক্ষে। কখনও রান তুলেছেন দ্রুত, কখনও বা ধীরে। শেষ ৯ বলে বলে যখন ১৮ রান লাগে ঠিক তখনই জয়ের জন্য বেছে নেন এবারের বিশ্বকাপের সেরা বোলারের তকমা পাওয়া শাহিন আফ্রিদিকে।
১৯তম ওভারের শেষ তিন বলে টানা তিন ছক্কা হাঁকিয়ে হাঁকিয়ে অজিদের সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেন ম্যাথু ওয়েড। দুজনের ৪১ বলে ৮১ রানের অনবদ্য জুটির কাছেই হেরে গেল এবার শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেভারিট হয়ে ওঠা পাকিস্তান। স্টয়েনিস ৪০ (৩১) ও ওয়েড অপরাজিত থাকেন ৪১ (১৭) রানে।
সন্ধ্যায় টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই অজি বোলারদের উপর চড়াও হন দুই পাকিস্তানি ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। অথচ এই ম্যাচ খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল রিজওয়ানের। ম্যাচের আগের দিন হঠাত জ্বরে শঙ্কা জাগে না খেলার।
তবে রিজওয়ানের ব্যাটে ব্যাটে ভর করেই পাওয়ার প্লেতে ৪৭ রান তুলে পাকিস্তান। ৯.৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৭১ রান আসলেও দশম ওভারের শেষ বলে অ্যাডাম জাম্পার বলে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দেন বাবর আজম। ৩৪ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন সাজঘরে।
বাবরের ফেরার পর অনেকটা ধরে খেলার চেষ্টায় থাকা রিজওয়ানের সঙ্গে দ্রুত রান তুলেন ফখর জামান। রিজওয়ান ১৭.২ ওভারের সময় মিচেল স্টার্কের বলে স্টিভেন স্মিথের হাতে ক্যাচ দেন ৫২ বলে ৬৭ রান করে।
পরের ওভারে আসিফ আলীকে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফেরান প্যাট কামিন্স। তবে সময় যত গড়ায় ততই ভয়ংকর হয়ে ওঠেন ফখর। মাত্র ৩২ বলে খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস। মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের শেষ ওভারে দুই ছয় হাঁকান ফখর। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে ১৭৬ রান তোলে পাকিস্তান।
২০১০ সালে ফাইনাল খেলা অস্ট্রেলিয়ার সামনে এবার প্রতিপক্ষ তাসমান পাড়ের প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড।
এমআর/