ঢাকামঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ফোনের আসক্তিতে শিশুদের হতে পারে যে রোগ

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩ , ০৭:০৪ পিএম


loading/img

বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুদের মোবাইল থেকে দূরে রাখতে বেশ হিমশিম খেতে হয় অভিভাবকদের। শিশুরা মোবাইল ছাড়া থাকতে চায় না বললেই চলে। শিশুদের জেদের কারণে অধিকাংশ পিতা-মাতা তাদের মোবাইল ফোনে আসক্তি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা না করে বিষয়টিকে স্বাভাবিক ভেবে মেনে নেন। কিন্তু মোবাইল ফোনে আসক্তি তাদের শিশুদের জন্য ভয়াবহ হুমকিতে পরিণত হতে পারে, তা হয়তো অনেকেই জানেন না।

বিজ্ঞাপন

জেনে নিন ফোনের আসক্তিতে শিশুদের যে রোগ হতে পারে- 

আজকের শিশুরা এমন একটি রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি পরিবেশে বেড়ে উঠছে, যা মানব ইতিহাসে আগে কখনও ছিল না। মোবাইল ফোন এবং মোবাইল ফোন মাস্ট দ্বারা নির্গত বিকিরণ শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। মোবাইল ফোনে আসক্তির কারণে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের রোগ বা সমস্যা হতে পারে ।

বিজ্ঞাপন

নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার: গবেষণায় দেখা গেছে, যে শিশুরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদের মস্তিষ্ক ও কানে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ক্যানসার: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (who) সেলফোন বিকিরণকে ‘মানুষের জন্য সম্ভবত কার্সিনোজেনিক’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় ৬০ শতাংশের বেশি বিকিরণ মস্তিষ্কে শোষণ করে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে তাদের মস্তিষ্কের পাতলা ত্বক, টিস্যু এবং হাড়গুলো তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্বিগুণ বিকিরণ শোষণের জন্য আরও দুর্বল করে তুলতে পারে; যা হোক, অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। তাদের উন্নয়নশীল স্নায়ুতন্ত্র তাদের এই ‘কার্সিনোজেন’-এর জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। মোবাইল থেকে রেডিও তরঙ্গ শুধু কানের আশপাশে নয়, মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করে। বিঘ্নিত মস্তিষ্কের কার্যকলাপ শিশুদের শেখার ক্ষমতা এবং অন্যান্য আচরণগত সমস্যাকে ব্যাহত করতে পারে। এমনকি এটি তাদের মেজাজ এবং ক্লাসরুমে শেখার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যদি তারা বিরতির সময় ফোন ব্যবহার করে থাকে।

এদিকে, কিশোরদের মতো শিশুরাও মোবাইল ফোনে আসক্ত। তারা সব সময় তাদের মোবাইল ফোনে গেম খেলে, চ্যাট করে এবং তাদের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে। স্কুল সরবরাহের পাশাপাশি, অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্কুলে, প্রতিদিনের ভ্রমণে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। তারা তাদের অবসর সময়ে ফোনে কথা বলে এবং ক্লাস চলাকালীন বার্তা পাঠায়। এভাবে তারা শেখানো পাঠটি মিস করে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে সানি’স স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন ডেভিড কার্পেন্টার বলেছেন, ‘শিগগিরই আমরা হয়তো একটি মহামারি রোগের শিকার হতে পারি এবং সেটি হবে মস্তিষ্কের ক্যানসার।’ গবেষণা থেকে আরও বেরিয়ে এসেছে যে মোবাইল ফোন ব্যবহার শিশুদের শ্রবণক্ষমতাও হ্রাস করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

রেডিয়েশন গবেষক কেরি ক্রফটন বলেছেন, তবে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই এখন ১৮ বছরের কম বয়সীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, যা কিনা অন্যদের জন্য একটি ভালো নিদর্শন। মোবাইলের প্রতি আসক্তি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট করছে। ফলে তৈরি হয় শিশুদের নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। তা ছাড়া প্রযুক্তির এ আসক্তির ফলে শিশুদের আবার দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে। ফলে শিশুর স্থূলতাও বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রাখার ফলে শিশুর চোখের সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। শিশুদের পারিবারিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ব্যহত হচ্ছে।

হাতে ফোন অনেক অভিভাবক তুলে দিচ্ছেন, এতে করে আপনার বাচ্চা শান্ত থাকলেও নিজের অজান্তেই ঘটে যেতে পারে বিশাল দুর্ঘটনা। তার জন্য আগে থেকেই আপনাকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 

এ ছাড়াও দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহারে বড় ছোট যে কারও সঙ্গেই ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। তাই ফোন ব্যবহারে সবার সতর্ক থাকা জরুরি। 

ফোন ব্যবহার করার সময় যেদিকে নজর রাখবেন দেখে নিন: 

  • শিশুর হাতে খুব পুরোনো ফোন দেবেন না এবং আপনিও ব্যবহার করবেন না।
  • শিশুর হাতে থাকা ফোনটি গরম হয়েছে কি না কিছুক্ষণ পর চেক করুন, ফোন গরম হয়ে গেলে হাতে রাখবেন না।
  • ফোন চার্জ করার সময় ছোট বড় কেউই ফোনে কথা বলবেন না। এমনকি ফোনটি ব্যবহারও করবেন না।
  • সারারাত ফোন চার্জে রাখবেন না। এতে ব্যাটারি বেশি চার্জ হয়ে গিয়ে গরম হয়ে যাওযার সম্ভবনা থাকে।
  • ফোনটি শুধুমাত্র ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করুন।

শিশুদের মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখতে হবে। কোনোভাবেই শিশুদের মোবাইল ফোনে আসক্ত হতে দেওয়া যাবে না। তাদের নিকট মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত করতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশে তাদের পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। শিশুদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া উচিত, এতে তাদের মন প্রফুল্ল থাকবে এবং নানা বিষয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হবে। ফলে তাদের মেধা বিকশিত হবে। সর্বোপরি শিশুদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |