ইউএনওর এক থাপ্পড়ে ৬ ছাত্রী অজ্ঞান
রাঙামাটিতে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে পরীক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমামের বিরুদ্ধে। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে পাঁচ ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, গত শনিবার গণিত পরীক্ষা চলাকালে বেলা ১১টায় লংগদু বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান ইউএনও। এ সময় কেন্দ্রের ৬নং কক্ষে প্রবেশ করে জুনায়েদ ইসলাম পেয়ার নামের এক ছাত্রকে অন্য ছাত্রদের খাতা দেখানোর অপরাধে চড় মারতে শুরু করেন। এ সময় জুনায়েদের খাতাও কেড়ে নেন তিনি। শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে ছাত্রের শার্টের কলার ধরে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। একই সঙ্গে গালাগাল ও চিৎকার করে জুনায়েদকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। বহিষ্কারের কথা শুনে শুভ নামের অন্য এক শিক্ষার্থী জুনায়েদকে ইউএনওর কাছে ক্ষমা চাইতে বললে তাকেও চড় মারেন ইউএনও।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ট্রলিচাপায় স্কুলছাত্র নিহত
--------------------------------------------------------
এসময় দায়িত্বরত কক্ষ পরিদর্শকরা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক শিক্ষিকা বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে কান্নাকাটিও করেন বলে জানিয়েছেন তারই এক সহকর্মী।
শিক্ষার্থী জুবায়ের ইসলাম পেয়ার বলেন, সামান্য কারণে আমাকে ১৫-২০টা চর মেরেছে এবং খাতাও কেড়ে নিয়েছে। আমি ঘটনার পর আধাঘণ্টা কিছু লিখতেই পারিনি। তাই পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক বলেন, আমার দীর্ঘদিন পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষার্থীদের সাথে এমন খারাপ আচরণ করতে কোনো কর্মকর্তাকে দেখিনি। তার (ইউএনও) এমন রূঢ় আচরণের কোনো প্রতিবাদই আমরা করতে পারিনি।
এ খবর পাশের লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা শুনলে তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আতঙ্কে পাঁচ ছাত্রী অজ্ঞান হলে তাদেরকে লংগদু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রাবেতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
ইউএনওর বিরুদ্ধে লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের এক পরীক্ষার্থীকেও চড় মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে দায়িত্বরত শিক্ষকরা ছাত্রকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করলেও ইউএনও সবাইকে ধমক দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।
পরীক্ষার্থীরা জানায়, প্রশ্ন সহজ হলেও ইউএনওর এমন আচরণের কারণে পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনি কোনো শিক্ষার্থী। বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করবে বলে আশঙ্কা করছে। শুধু মারামারি নয়, গালাগাল, ধমক ও ফাইল ছুঁড়ে মারাসহ অনেক খারাপ আচরণ করেছেন ইউএনও।
ভুক্তভোগী ইসমাঈল হোসেন নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, শুধু গণিত পরীক্ষাই নয়, ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষার দিনও তাকে এবং তার পাশের ছাত্রকে চড় মেরেছেন ইউএনও। এ সময় তিনি গালাগাল করে বলেন ‘তোর মতো এমন ছাত্র লাগবে না’।
এক ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইউএনও’র আচরণ খুবই খারাপ।
শাহীনা আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, ছেলে-মেয়েরা ভুল করতেই পারে। তাই বলে এভাবে সবার সামনে মারধর করে কোনোভাবেই ঠিক করেননি ইউএনও।
লংগদু বালিকা বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক রবিরঞ্জন চাকমা বলেন, শিক্ষার্থীকে চড় মারার বিষয়টি জানি না, তবে ইউএনও স্যার রাগারাগি করেছেন এটা শুনেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা ইউএন মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম বলেন, মারধর করা হয়নি শুধু ধমক দেয়া হয়েছে। অসুবিধা নেই, এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ডাক্তার তন্ময় বড়ুয়া বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা খারাপ হওয়াতে অসুস্থতার ভান করেছে। তাদের শারীরিক কোনো সমস্যা ছিল না।
আরও পড়ুন:
এসএইচ/পি
মন্তব্য করুন