ঢাকাসোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

যে নারীর কারণে প্রাণ হারালেন আইএস প্রধান আল-বাগদাদী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯ , ০৩:৫৫ পিএম


loading/img
ছবি সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবারের সন্ধ্যায় যখন তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের ‘সিচুয়েশন রুমে’ বসছেন, ঠিক সে সময়ে ৬ হাজারেরও বেশি মাইল দূরে এলিট মার্কিন বাহিনী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নামছে।

বিজ্ঞাপন

হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, স্থানীয় সময় পাঁচটার দিকে আটটি চিনুক এবং ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে ডেল্টা ফোর্সসহ এলিট বাহিনী এক ঘণ্টা দশ মিনিট ধরে খুব বিপজ্জনক এলাকার মধ্যে দিয়ে উড়েছে। উত্তর ইরাক থেকে উড়ে তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের বারিশার দিকে। ওই হেলিকপ্টারগুলো স্থানীয় গোলাগুলির মুখে পড়ে, এ তথ্য দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। তবে সে বাধা কাটিয়ে ফিরতে পেরেছে বাহিনী।

রোববার ভোরের অন্ধকারে কয়েকশ মাইল ফের পাড়ি দিয়েছে তারা। তাদের লক্ষ্য ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতিষ্ঠাতা এবং শীর্ষ জঙ্গি নেতা আবু বকর আল-বাগদাদী। মার্কিন বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে যিনি নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্প নিজেই রোববার ওই অভিযানের বর্ণনা দিয়েছেন। অন্য মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য আল-বাগদাদীর শেষ মুহূর্ত সম্পর্কে খুব একটা মুখ খোলেননি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে যতটা জানা গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে- শনিবার মধ্যরাতের কিছু পরে সেনা হেলিকপ্টারের শব্দ শোনা যায়। তারপর টানা গুলিবর্ষণের শব্দ। তবে সাধারণ দিনে যেমন গোলাগুলি চলে, তেমন শব্দ নয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি! তার পরে যা হয়েছে, তা ট্রাম্পের ভাষায়, ‘সিনেমার মতো।’

অভিযানের নাম, কীভাবে আল-বাগদাদীর খোঁজ পাওয়া গেলো, আইএসের কী হতে চলেছে— এমন কিছু টুকরো টুকরো তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। জানানো হয়েছে, বারিশার ওই চত্বরটিতে ঢোকার পরে মূল প্রবেশপথে বিস্ফোরক থাকতে পারে এই আশঙ্কায় মার্কিন বাহিনী একটা দেয়াল ভেঙে ঢুকে পড়ে। সেখানে ঢোকার পরেই বেশকয়েক জন আইএস জঙ্গিকে সামনে পেয়ে তাদের মারে মার্কিন বাহিনী, এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই।

দুজন জঙ্গিকে জীবিত ধরা হয়, আর ১১টি শিশুকে হেফাজতে নেয়া হয়। এই সময়ে অভিযানে দলের একটি কুকুর আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর পরের নিশানা আল-বাগদাদীর দুই স্ত্রী। তাদের আত্মঘাতী জ্যাকেট থেকে অবশ্য বিস্ফোরণ ঘটেনি। শেষমেশ ফাঁদে পড়েন আল-বাগদাদী। তার পরের গল্পটা ট্রাম্প বিস্তারিতভাবে বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

ইরাকের গোয়েন্দা বিভাগের দুই কর্মকর্তার দাবি, আল-বাগদাদীকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, ইসমাইল আল-এথাউইয়ি। ওই কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এথাউইয়ি কিছু দিন আগে তুরস্কে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তারপর তাকে ইরাকের হাতে তুলে দেয়া হয়। সেখানেই সে আল-বাগদাদী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। আল-বাগদাদীর গতিবিধি এবং গোপন আস্থানার খবর অনেকটাই স্পষ্ট হয় এথাউইয়ির কাছ থেকে। সে জানিয়েছিল, ধরা পড়া এড়াতে সবজিবোঝাই মিনিবাসে চড়ে রণকৌশল নিয়ে আলোচনা চালাতেন আল-বাগদাদী। 

কয়েকদিন আগে ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে আল-বাগদাদীর সম্ভাব্য আস্তানার খবর দেয়া হয়। বারিশার ওই চত্বরে যে আল-বাগদাদী লুকিয়ে, তা নিশ্চিত জানার পরই কমান্ডারদের সবুজসঙ্কেত দেন ট্রাম্প।

---------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন: অফিস সহকারীকে ভালোবাসার জেরে পদত্যাগ যুক্তরাষ্ট্রের নারী আইনপ্রণেতার
---------------------------------------------------------------

ট্রাম্পের ভাষায়, আমরা জানতে পেরেছিলাম, তিনি কোন দিকে এগোচ্ছেন। মাঝে শুনলাম, তিনি অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি যাননি। তিন-চারবার তাই চেষ্টা করেও এগোনো হয়নি। কারণ আল-বাগদাদী ঘনঘন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলছিলেন। শেষমেশ হাতে পাওয়া গেল তাকে।

ইরাকি এবং কুর্দিশ সেনার থেকেও তথ্য পেয়েছে সিআইএ। সেই সূত্রে এক সিরীয় ইঞ্জিনিয়ারের খোঁজ পাওয়া যায়। যিনি বারিশা এলাকা সংলগ্ন গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। তিনি জানিয়েছিলেন, হুরাস আল-দিন নামে আর একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর কমান্ডার আবু মুহাম্মদ সালামার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আল-বাগদাদী। অভিযানের পরে ওই কমান্ডারের কী হয়েছে, তা এখনও অস্পষ্ট।

এদিকে হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘কেলা ম্যুলার’। আইএসের হাতে বন্দি হয়েছিলেন ২৬ বছরের মানবাধিকার কর্মী কেলা। ২০১৩ সালে তুরস্ক সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ার হাসপাতালে কাজ করতে যান তিনি। ২০১৫ সালে তার মৃত্যুর খবর আসে। দেহ পাওয়া যায়নি। কেলার মর্মান্তিক পরিণতির কথা মনে রেখেই অভিযানে তার নাম রাখায় আপ্লুত তার বাবা-মাও।

খবরে বলা হয়েছে, আল-বাগদাদীর পরে আইএসের প্রধান হয়েছে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বাহিনীর অফিসার আবদুল্লা কারদাশ। ইরাকের জেলে আল-বাগদাদীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেটা ২০০৩-০৪ সালের ঘটনা। আইএসে যোগ দেয়ার আগে আল কায়দার ধর্মীয় প্রচারক ছিল কারদাশ। নিষ্ঠুর এই জঙ্গি নেতা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দলে। আইএসের প্রচার সংস্থা আমাক-এর বিবৃতি অনুযায়ী, আল-বাগদাদী চলতি বছরের আগস্টেই কারদাশকে গোষ্ঠীর দৈনন্দিন কার্যকলাপ দেখভালের ভার দিয়েছিলেন।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |