গাজীপুরের কালিয়াকৈর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। ইটভাটাগুলোতে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসাবে পোড়ানো হচ্ছে শত শত মণ কাঠ। এতে পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং শত শত হেক্টর কৃষি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে রাতের আঁধারে কৃষি জমির মাটি নিয়ে যাচ্ছে ওইসব ইট ভাটায়। ফলে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, তেমনি দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমনি চিত্র দেখা যায়।
এলাকাবাসী, উপজেলা প্রশাসন ও ইটভাটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার তিন ফসলি জমি গিলে খাচ্ছে ইটভাটাগুলো।
উপজেলায় প্রায় ৩০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে এসব তিন ফসলি জমিতে। ইটভাটাগুলোর বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স থাকলেও করা হয়নি নবায়ন। তারা আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে অবাধে কাঠ পোড়াচ্ছে। কৃষকের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাটি কিনে নিচ্ছে ওইসব ভাটার মালিকরা। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি। এদিকে ইটভাটার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যার ফলে প্রতিনিয়তই অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সের মানুষ।
মাওনা-ধামরাই আঞ্চলিক সড়কের পাশেই মহরাবহ এলাকায় অনুমোদনহীন মেসার্স লামিয়া মোল্লা ব্রিকস ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটাতে প্রকাশ্যেই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। মেসার্স এমজিবি ব্রিকসেও পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটা দুটি গাজীপুর সদর কোনাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ছিল। সেখানে উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে দিলে পরে উপজেলায় এসে তিন ফসলি জমিতে পুনরায় গড়ে তোলা হয়েছে এ দুটি ইটভাটা। এদিকে মেসার্স টিএসবি ব্রিকসেরও একই অবস্থা। মেসার্স এস এম ন্যাশনাল ব্রিকস, মেসার্স একতা ব্রিকস, মেসার্স সততা ব্রিকস-১, মেসার্স এসবিসি ব্রিকস, মেসার্স বড়ইবাড়ী ন্যাশনাল ব্রিকস, মেসার্স সততা ব্রিকস-২, মেসার্স এসএমবি ব্রিকস-১ ও ২, মেসার্স কেবিএম ব্রিকস, মেসার্স পাঁচ তারা এন্টারপ্রাইজ ব্রিকস, মেসার্স এসকিউবি ব্রিকস, মেসার্স বিএসএম ব্রিকস, মেসার্স জাফর আলী অটো ব্রিকসসহ উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অনুমোদনহীন ইটভাটা।
এসব ইটভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এসব ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমিসহ আশপাশের পরিবেশ। স্থানীয়রা শ্বাসকষ্ট ছাড়াও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, এসব অবৈধ ইটভাটা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে চলছে। আবার অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ইট পুড়িয়ে যাচ্ছেন অবৈধ ইটভাটার মালিকরা। এতে একদিকে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে দূষণের শিকার হচ্ছে পরিবেশ। বেশির ভাগ ইটভাটায় ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনির বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে স্বল্প উচ্চতার চিমনি যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ইটভাটার ধুলা ও কালো ধোঁয়ায় আশপাশের বাড়িঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চর্মরোগ, শ্বাস কষ্টসহ নানা অসুখে ভুগছে মানুষ।
কালিয়াকৈর ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম আরজু জানান, কোনো কৃষি জমির মাটি ভাটায় নেওয়া হয় না। তবে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ভাটা চলে। কেউ যদি কাঠ পুড়িয়ে থাকে তার দায়ভার মালিক সমিতি নিবে না।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহামেদ জানান, অবৈধ ইটভাটার তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আরেফিন বাদল বলেন, যেসব ভাটা সরকারিভাবে অনুমোদিত ওইসব ভাটায়, কিন্তু কাঠ পোড়ানোর সুযোগ নেই। যারা কাঠ পোড়াচ্ছে নিশ্চয়ই তারা অবৈধভাবে কোনো উপায় অবলম্বন করছে। এ ধরনের ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরটিভি/এএএ