ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ৩১ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে নৌবাহিনী। এ সময় ভারতীয় পতাকাবাহী দুটি ট্রলার জব্দ করা হয়। গত মঙ্গলবার এসব ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশি জেলেরা উভয় দেশে একই সময়ে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছেন।
জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশের প্রজনন রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার ১২ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। এ কারণে নদীতে ও সাগরে বাংলাদেশি জেলেরা ইলিশ ধরা থেকে বিরত রয়েছেন। কিন্তু এই সময়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে ইলিশ শিকার করে যাচ্ছেন।
ভারতীয় ৩১ জেলেকে আটকের বিষয় নিশ্চিত করেন কোস্টগার্ড দক্ষিণ অঞ্চল-ভোলার মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড ঠেকাতে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করছে। এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার দুটি ট্রলারসহ ভারতীয় ৩১ জেলেকে আটক করা হয়েছে।’
বাংলাদেশি জেলেদের অভিযোগ, সাগরে তাদের সঙ্গে দস্যুর মতো আচরণ করেছে ভারতীয় জেলেরা। হ্যান্ডমাইকে বাংলাদেশি জেলেদের সরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। সরতে না চাইলে ইট-পাথর নিক্ষেপ করছে; জাল কেটে দিচ্ছে। ভারতীয় জেলেদের ট্রলারে ছয় সিলিন্ডারের শক্তিশালী ইঞ্জিন। ধাক্কা দিয়ে তারা বাংলাদেশি ছোট ছোট ট্রলারকে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
বরগুনার পাথরঘাটার জেলে মোহাম্মদ আলম মাঝি বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে আমাদের অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিত। ভারতীয় জেলেদের দ্বারা আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পেতাম না। উল্টো আমাদের ধমকিয়ে রাখত। এবার যদি ভারতীয় জেলেদের ফিরানো যায় তাহলে আগামী বছর দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’
মোহাম্মদ নুহু নামের এক জেলে বলেন, ‘ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় চালনার বয়া, মাইজদার বয়া, বড়ইয়ার চর, ফেয়ারওয়ের বয়া, বড় আমবাড়িয়া, ডিমের চর, সোনার চর, কবরখালীসহ ইলিশ বিচরণের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসে মাছ শিকার করে।’
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি আবুল হোসেন ফরাজী বলেন ‘আগের সরকার ভারতের পাতানো নিষেধাজ্ঞা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতীয়দের ইলিশ ধরার সুযোগ করে দিয়েছে। এ সুযোগে ভারতীয়রা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এসে ইলিশ শিকার করছে। এই পাতানো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ভারত ও বাংলাদেশে একত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর চাই।’
গত মঙ্গলবার দেওয়া নৌবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ বিএনএস আখতার উদ্দিনের টহল চলাকালে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বিদেশি পতাকাবাহী দুটি ট্রলারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়। এ সময় ট্রলার দুটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু নৌবাহিনীর জাহাজ ট্রলার দুটিকে বাংলাদেশের জলসীমার ভেতরেই আটক করতে সক্ষম হয়।
আটক ট্রলার দুটিতে মোট ৩১ জন সদস্য ছিলেন। তাঁদের বাড়ি ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বিভিন্ন গ্রামে। ট্রলার দুটি পটুয়াখালীতে এনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আটকদের কলাপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে নৌবাহিনী।
দক্ষিণ স্টেশন কোস্টগার্ড ভোলা জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, ‘দেশীয় জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ ঘটনা রয়েছে। তবে সামনের দিনগুলোতে কঠোর হয়ে টহল জোরদার করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় জেলে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আমরা আর নিতে চাই না। এ জন্য গভীর সমুদ্রে জাহাজের পাশাপাশি স্পেশাল টহলের জন্য ইতিমধ্যে অতিরিক্ত শক্তিশালী ট্রলার ও স্পিডবোট প্রস্তুত করা হয়েছে।’
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুয়েল ইসলাম জানান, ভারতীয় জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা পটুয়াখালী জেলা কারাগারে রয়েছেন।
আরটিভি/এসএপি