নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে হাত-মুখ বেঁধে মারধর ও গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার (৫ জুন) সকালে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ বাড়ির লোকজন মিলে ওই গৃহবধূকে নির্যাতন ও গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর নাম সুবর্না আক্তার (২২)। তিনি উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মো. বাচ্চু মিয়ার মেয়ে। সুবর্নার ৯ মাস বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার সকালে ভুক্তভোগী সুবর্না আক্তার বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওই গৃহবধূর শরীরে মারধরের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। তাই অভিযোগটি আমলে নিয়ে থানায় মামলা রেকর্ড করা হচ্ছে। পরে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
আসামিরা হলেন, সুবর্নার স্বামী উপজেলার জয়পুর গ্রামের মো. সাকিব মিয়া (২৬), তার দুই বোন মোছা. সুমা আক্তার (৩০), মোছা. রুমা আক্তার ( ২৮), শ্বশুর মো. খোকন মিয়া (৫০) ও শাশুড়ি মোছা. তহুরা আক্তার (৪৮)।
মামলার অভিযোগ, পুলিশ ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জয়পুর গ্রামের মো. সাকিব মিয়ার সঙ্গে দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সুবর্নার। বিয়ের পর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে সাকিব। মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে গত বছর সুবর্নার দরিদ্র বাবা বাচ্চু মিয়া জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা সাকিবকে দেন। সম্প্রতি আবারও টাকার জন্য নির্যাতন শুরু করে সাকিব। কিন্তু এবার টাকা এনে দিতে অপারগতা জানায় সুবর্না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সাকিব, তার বাবা-মা ও দুই বোন মিলে সুবর্নাকে হাত-মুখ বেঁধে পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে রান্না ঘরে থাকা খুন্তি গরম করে সুবর্নার পিটে ছ্যাঁকা দেয়। যন্ত্রণায় ছটপট করতে থাকা সুবর্না তাদের হাত থেকে কোন রকমে ছুটে মুখের বাঁধন খুলে চিৎকার দেয়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা গিয়ে সুবর্নাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সুবর্না বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে স্বামী,শ্বশুর-শাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী সুবর্নার বাবা বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি গরিব মানুষ। কোনোরকম কাজকর্ম করে সংসার চালাই। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি দুই বছর হয়েছে। বিয়ের সময় দুই-তিন লাখ টাকা খরচ করে জিনিসপত্র দিয়েছি। মেয়েকে টাকার জন্য স্বামীসহ পরিবারের লোকজন অত্যাচার করে। তাই বিয়ের পরের বছর জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন আবার টাকার জন্য অত্যাচার শুরু করেছে। কিন্তু গরীব মানুষ টাকা দেব কোথা থেকে। জমি যেটুকু ছিল বিক্রি করে টাকা দিয়েছি এখন বাড়িটা ছাড়া কোন জমি নেই। টাকা দিতে পারিনি বলে মেয়েটাকে বিরাট মারধর করেছে। তাই আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সুবর্নার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্ত সাকিব মিয়ার মোবাইলে একাধিকার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার বাবা মায়ের মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।